গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যখন গর্ভধারণের সময় শরীর নানা পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা একটি সাধারণ অসুবিধা, যা দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি ও চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ‘গর্ভবতী মায়ের গ্যাস হলে করনীয়‘। এখানে আপনি পাবেন কার্যকর পরামর্শ, প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের তথ্য, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী।
গর্ভবতী মায়েদের গ্যাসের কারণ
গর্ভাবস্থায় শরীরের নানা পরিবর্তন ঘটে যা শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ দিক থেকেও প্রভাব ফেলে। এই পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম হলো হজম প্রক্রিয়ায় ধীরগতি এবং অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া।
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে প্রোগেস্টেরন সহ অন্যান্য হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যা পাচনতন্ত্রের মসৃণ পেশীগুলোকে শিথিল করে।
এই শিথিলতা খাদ্য হজমে বিলম্ব ঘটায় এবং খাদ্যের অর্ধ-হজম প্রক্রিয়ার ফলে অন্ত্রে গ্যাস জমতে থাকে, যা পেটে অস্বস্তি ও ফাঁপা অনুভূতি সৃষ্টি করে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনও গর্ভবতী নারীদের গ্যাস সমস্যা বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অধিকাংশ মা স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করেন, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, শস্য এবং ডালের মতো খাদ্য উপাদান থাকে।
তবে এইসব খাদ্যে উপস্থিত উচ্চ ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনির কারণে পাচনতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া খাদ্য ভাঙতে গিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করে। খাদ্যের সাথে মিলিত অন্যান্য উপাদান যেমন কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের অপরিবর্তিত হজম প্রক্রিয়া ও এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।
গর্ভের বৃদ্ধি ও ওজন বৃদ্ধির ফলে অন্তরের ওপর যে অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়, তাও গ্যাসের সমস্যার একটি বড় কারণ।
গর্ভের স্ফীতি এবং তার ফলে অন্ত্রের সংকোচন খাদ্য সরবাহকে ধীর করে দেয়, যার ফলে খাদ্যের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান অন্তরে গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে, হজম প্রক্রিয়া আরও প্রভাবিত হয় এবং ফলস্বরূপ, মায়েদের মধ্যে বেদনাদায়ক ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
এসব সমস্যার প্রতিকার হিসেবে ছোট ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান এবং হালকা ব্যায়াম (যেমন হাঁটা) অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া, কিছু সময় খাদ্যের ধরন ও পরিমাণ পরিবর্তন করে দেখা যেতে পারে, যাতে হজম প্রক্রিয়া সহজতর হয় এবং গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কমে।
তবে, যদি গ্যাসজনিত অসুবিধা মারাত্মক হয় বা নিয়মিত বিরক্তি সৃষ্টি করে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে মা এবং শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।
গর্ভবতী মায়েদের গ্যাসের লক্ষণ
গর্ভবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচের টেবিলে এসব লক্ষণ ও তাদের সম্ভাব্য কারণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে হজম ধীরে পড়ে এবং গ্যাস সংক্রান্ত লক্ষণ দেখা দেয়। নিচের টেবিলে এসব লক্ষণ ও সম্ভাব্য কারণ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।
লক্ষণ | বিবরণ | সম্ভাব্য কারণ |
পেটে ফোলাভাব | পেটে গ্যাস জমার ফলে স্হূলতা ও ফোলাভাব দেখা দেয়, যা পেটকে ফোলা ও ভারী অনুভূতি প্রদান করে। | গর্ভাবস্থার হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হজম প্রক্রিয়া ধীরে চলে এবং খাদ্য সঠিকভাবে না পাচিত হওয়ায় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। |
পেট ব্যথা/অস্বস্তি | পেটের কোনো অংশে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা বা অস্বস্তির অনুভূতি, যা মাঝে মাঝে তীব্র হতে পারে। | ধীরে হজম ও জমে থাকা গ্যাসের চাপ পেটের পেশীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে, যা ব্যথার কারণ হিসেবে কাজ করে। |
অতিরিক্ত বেল্ছি/গ্যাস ফাঁপা | বেল্ছি বা গ্যাস ফাঁপা আকারে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বায়ুর মুক্তি। | খাবার গ্রহণের সময় অতিরিক্ত বায়ু গ্রহন এবং হজম প্রক্রিয়ার ধীরগতির ফলে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। |
বুক জ্বালাপোড়া | খাবারের পরে বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি, যা এসিড রিফ্লাক্স হিসেবে অভিহত হতে পারে। | গর্ভাবস্থার হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এসোফেগিয়াল স্ফিঙ্ক্টার শিথিল হওয়া এবং ধীরে হজমের ফলে পাকস্থলীর এসিড নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন ঘটায়। |
বমি ভাব | পেটে জমে থাকা গ্যাসের চাপ বা হজমের সমস্যা থেকে উদ্ভূত অস্বস্তি, যার ফলে বমি করার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। | ধীরে হজম প্রক্রিয়া ও গ্যাসের অতিরিক্ত উৎপাদন পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে, যা বমি ভাবের কারণ হতে পারে। |
গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হজম ধীরে পড়ে, যার ফলে পেটে ফোলাভাব, ব্যথা, অতিরিক্ত বেল্ছি, বুকের জ্বালাপোড়া ও বমি ভাবের লক্ষণ দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা হরমোনজনিত পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, এবং বাড়ন্ত শিশুর পেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কারণে হয়। এই অস্বস্তি দূর করতে কিছু কার্যকরী অভ্যাস অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
বড় পরিমাণে খাবার না খেয়ে দিনে কয়েকবার ছোট ছোট ভাগে খাওয়া উচিত, কারণ এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং গ্যাসের পরিমাণ কমায়। খাবার ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে হজম সহজ হয় ও পেটে বাতাস প্রবেশের সম্ভাবনা কমে।
বাঁধাকপি, ফুলকপি, মটরশুটি, ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মশলাদার খাবার গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে, তাই এগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো।
পাশাপাশি, প্রসেসড খাবার এবং কার্বোনেটেড ড্রিংকস (যেমন কোলা ও সোডা) পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো পেটে বাতাস তৈরি করে।
হজম ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুব জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত, তবে খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি পান না করাই ভালো, কারণ এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। উষ্ণ পানি, লেবু পানি বা আদা চা পান করলে হজমের উন্নতি হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কমে।
এছাড়া, হালকা শারীরিক পরিশ্রম ও হাঁটাহাঁটি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটা বা নরমাল এক্সারসাইজ করা উচিত, যা পেটে গ্যাস জমাট বাঁধা থেকে রক্ষা করে। একটানা অনেকক্ষণ বসে বা শুয়ে থাকলে গ্যাসের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
মনোসংযোগ ও স্ট্রেস কমানোও পেটের গ্যাস সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে, তাই রিল্যাক্সেশন টেকনিক যেমন গভীর শ্বাস নেওয়া, মেডিটেশন বা গর্ভাবস্থার জন্য উপযোগী যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করাও হজম প্রক্রিয়ার উন্নতিতে সহায়তা করে।
গ্যাসের সমস্যা দূর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান কার্যকর হতে পারে। আদা চা, জিরা পানি এবং পুদিনা পাতার চা হজমের জন্য ভালো এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। দই বা অন্যান্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা বাড়ায়, যা হজম শক্তি উন্নত করে এবং গ্যাস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত, কারণ টাইট পোশাক পেটে চাপ সৃষ্টি করে এবং অস্বস্তি বাড়ায়। যদি গ্যাসের সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং তার সঙ্গে তীব্র ব্যথা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট বা ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণ গ্যাসের সমস্যা গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক হলেও যদি এটি খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা মায়েদের জন্য আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভকালীন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়া যাবে কি না জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় অনেক নারী গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং হজমজনিত সমস্যার সম্মুখীন হন, যা মূলত হরমোনের পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান শিশুর কারণে পেটে চাপ পড়ার ফলে ঘটে।
কিছু ওষুধ গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হলেও, মায়ের এবং শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অ্যান্টাসিড সাধারণত পেটের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে ব্যবহৃত হয় এবং দ্রুত আরাম দেয়। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (Gaviscon, Rennie) এবং ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Maalox, Gelusil) সমৃদ্ধ ওষুধ সাধারণত গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়।
তবে অতিরিক্ত সেবন করলে অ্যালুমিনিয়ামযুক্ত ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে ভ্রূণের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যাসিড উৎপাদন কমানোর জন্য হিস্টামিন-২ রিসেপ্টর ব্লকার (H2 ব্লকার) ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে ফ্যামোটিডিন (Pepcid) তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। আগে রেনিটিডিন ব্যবহৃত হলেও এটি বর্তমানে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে নিষিদ্ধ। যদি সাধারণ অ্যান্টাসিড কার্যকর না হয়, তবে চিকিৎসক এইচ-২ ব্লকার প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) যেমন ওমিপ্রাজল (Omez, Losec), প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল পেটের অ্যাসিড উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। যদিও গুরুতর অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)-এর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মাঝে মাঝে এই ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করেন, তবুও গর্ভাবস্থায় এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করা উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, PPI-এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার ভ্রূণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর না হলেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে সেবন করা উচিত নয়।
কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত, যেমন সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (বেকিং সোডা), যা শরীরের pH স্তর পরিবর্তন করতে পারে এবং ফ্লুইড রিটেনশন বা শরীরে অতিরিক্ত পানি জমার সমস্যা তৈরি করতে পারে। একইভাবে, অ্যালুমিনিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিডের অতিরিক্ত গ্রহণ বিষাক্ততার কারণ হতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। একবারে বেশি খাবার খাওয়ার পরিবর্তে অল্প পরিমাণে বারবার খাওয়া উচিত, যাতে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন না হয়।
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত, ভাজাপোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এসব খাবার অ্যাসিডিটি বাড়ায়। এছাড়া, সাইট্রাস ফলের রস ও কার্বোনেটেড পানীয় কম খাওয়াই ভালো। পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, তবে খাবারের সময় একসঙ্গে বেশি পানি পান না করাই উত্তম।
খাবারের পরপরই শোয়া উচিত নয়, এবং ঘুমানোর সময় মাথা একটু উঁচু করে শোয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে সাহায্য করে। হালকা শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটা, হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়।
যদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা খুব বেশি তীব্র হয়ে ওঠে বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরেও কমতে না চায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদী অ্যাসিডিটি ইসোফাজাইটিস (গলবিলের প্রদাহ) বা পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা মা ও শিশুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই, গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও নিরাপদ ওষুধ গ্রহণের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাই উত্তম পন্থা।
আরো পড়ুন : নবজাতকের টিকা : নবজাতকের টিকার তালিকা
আরো পড়ুন : নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়
আরো পড়ুন : নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়
আরো পড়ুন : নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত জানুন
আমাদের কথা :
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নারীদের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, যা কখনো কখনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষত, গর্ভবতী মায়েদের গ্যাসজনিত সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়, যা অনেক মা প্রতিদিনের জীবনে অনুভব করেন।
আমাদের লক্ষ্য হলো, গর্ভবতী নারীদের এই সমস্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা এবং তাদের জন্য কার্যকর পরামর্শ ও সমাধান তুলে ধরা।
এই ব্লগে আমরা গর্ভাবস্থায় গ্যাসের কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। আমাদের দেওয়া তথ্য গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে মায়েরা তাদের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন এবং গর্ভকালীন জীবনকে আরও স্বস্তিদায়ক করতে পারেন।
আমরা বিশ্বাস করি, সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু। তাই, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক জীবনযাত্রার প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি। এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা সেই দিকনির্দেশনাই দিতে চাই, যাতে মায়েরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তথ্য প্রদান নয়, বরং গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি সহায়ক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের সমস্যা সম্পর্কে সঠিক সমাধান পাবেন। আমরা চাই, প্রত্যেক মা যেন গর্ভাবস্থাকে সুন্দর ও স্বস্তিদায়কভাবে উপভোগ করতে পারেন।
আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। আপনার সুস্থতা আমাদের অগ্রাধিকার।
FAQ
গর্ভাবস্থায় কি গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়া যায়?
গর্ভাবস্থায় কিছু গ্যাসের ওষুধ নিরাপদ হলেও, কোনো ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণত, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
পেটে গ্যাস হলে কি করা উচিত?
গ্যাস হলে বেশি পরিমাণে পানি পান করুন, ধীরে ধীরে খাবার খান, এবং হালকা ব্যায়াম করুন। খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটা উপকারী হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেটের গ্যাস দূর করার উপায়?
ছোট ছোট পরিমাণে খাবার খান, বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, প্রচুর পানি পান করুন এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন। আদা চা বা লেবু পানি গ্যাস কমাতে সহায়ক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেশি গ্যাস হলে করণীয় কি?
যদি গ্যাসের সমস্যা খুব বেশি হয়, তাহলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন এবং হালকা ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে গ্যাস হওয়ার কারণ?
প্রোগেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি পাচনতন্ত্রকে শিথিল করে, যার ফলে খাবার ধীরে হজম হয় এবং গ্যাস জমে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ব্যথা কেমন হয়?
এটি পেটে টান বা চাপ লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে। মাঝে মাঝে এটি ফোলাভাব ও পেটের নিচের দিকে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ কি কি?
প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেটের টান, ব্যথা বৃদ্ধি, এমনিয়োটিক ফ্লুইড বের হওয়া, এবং জরায়ুর সংকোচন শুরু হওয়া।
গর্ভাবস্থায় কোন সবজি খাওয়া উচিত?
গাজর, পালং শাক, শসা, মিষ্টি আলু এবং ব্রকলি খাওয়া উপকারী। তবে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করতে পারে এমন সবজি (যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি) কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।