নবজাতকের পেট ফাঁপা একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক নতুন বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। সাধারণত, নবজাতকরা যখন বুকের দুধ বা ফর্মুলা পান করে, তখন তাদের পাকস্থলীতে বাতাস ঢুকে যেতে পারে, যা পেট ফেঁপে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এছাড়াও, হজমের সমস্যা বা কিছু নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই! কিছু সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া উপায় মেনে চললে নবজাতকের পেট ফাঁপার সমস্যা সহজেই কমানো যায়।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার কিছু নিরাপদ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি, যা আপনার শিশুকে আরাম দিতে সাহায্য করবে।
পেট ফাঁপা মানে কি
পেট ফাঁপা মানে হলো পেটের ভেতরে অতিরিক্ত গ্যাস জমে অস্বস্তি বা ফোলাভাব অনুভূত হওয়া। এটি তখনই হয় যখন হজমপ্রক্রিয়ার সময় বেশি পরিমাণে বাতাস পাকস্থলী বা অন্ত্রে আটকে যায়।
নবজাতকদের ক্ষেত্রে, এটি বেশ সাধারণ একটি সমস্যা, যা মূলত বুকের দুধ বা ফর্মুলা পান করার সময় বাতাস ঢুকে যাওয়া, অপর্যাপ্ত ডায়জেস্টিভ এনজাইম, বা অন্ত্রের সংবেদনশীলতার কারণে হতে পারে। পেট ফাঁপা হলে নবজাতক অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, কাঁদতে পারে এবং পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে।
নবজাতকের পেট ফাঁপার লক্ষণ
নবজাতকের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তার স্বাস্থ্যে অস্বস্তিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শিশুর অতিরিক্ত কান্না, খাওয়ার অনীহা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই পেট ফাঁপার লক্ষণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অস্বাভাবিক কান্না ও অস্থিরতা
পেটে গ্যাসের কারণে নবজাতক দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করতে পারে এবং অস্থির আচরণ প্রদর্শন করতে পারে। সাধারণত, এটি খাওয়ার পর বা হজম প্রক্রিয়ার সময়ে বেশি দেখা যায়।পেট ফোলা ও স্পর্শে শক্ত অনুভূত হওয়া
অতিরিক্ত গ্যাস জমে গেলে শিশুর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফেঁপে উঠতে পারে এবং স্পর্শ করলে শক্ত অনুভূত হতে পারে। এটি শিশুর অস্বস্তির অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
পেটে গড়গড় বা ফোঁসফোঁস শব্দ
হজমজনিত সমস্যার ফলে শিশুর পেটে গ্যাস জমে গেলে গড়গড় বা ফোঁসফোঁস শব্দ শোনা যেতে পারে, যা পেট ফাঁপার অন্যতম সাধারণ উপসর্গ।
অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা (ব্রপিং)
দুধ পান বা খাওয়ার সময় শিশুর পাকস্থলীতে বাতাস প্রবেশ করলে তা ঢেকুরের মাধ্যমে বের হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা নবজাতকের পেট ফাঁপার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
খাওয়ার অনীহা ও বারবার বিরতি নেওয়া
গ্যাসের কারণে পেটে অস্বস্তি অনুভূত হলে শিশুর খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে, বা দুধ পান করার সময় বারবার বিরতি নিতে পারে। কখনও কখনও শিশুটি খাওয়ার পর অস্বস্তি অনুভব করে, যার ফলে সে খেতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
পা ছোড়াছুড়ি বা টান টান করা
গ্যাস জমে গেলে নবজাতক স্বস্তি পেতে পা ছোড়াছুড়ি করতে পারে অথবা সাইকেলের মতো পা নাড়াতে পারে। এটি তার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যার মাধ্যমে সে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে।
ঘুমের সমস্যা
পেট ফাঁপা হলে শিশু অস্বস্তিতে ঘুমাতে পারে না বা ঘন ঘন জেগে যায়।
যদি এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে শিশুর পেট ফাঁপা দূর করা যেতে পারে।
নবজাতকের পেট ফাঁপার কারণ
নবজাতকের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা সাধারণত হজমজনিত জটিলতার কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যা এই সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। সঠিক কারণ চিহ্নিত করা হলে সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। নিচে নবজাতকের পেট ফাঁপার সম্ভাব্য কারণসমূহ আলোচনা করা হলো—
কারণ | ব্যাখ্যা |
বাতাস গেলা | দুধ পান করার সময় শিশুর পাকস্থলীতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, যা গ্যাসের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যদি শিশুটি খুব দ্রুত খায়, সঠিকভাবে স্তন্যপান না করে, বা বোতলের নিপল সঠিকভাবে না বসানো হয়, তাহলে তার পেটে অতিরিক্ত বাতাস জমতে পারে। |
অপরিপক্ব হজম প্রক্রিয়া | নবজাতকের হজমতন্ত্র সম্পূর্ণ পরিপক্ব নয়, ফলে তার পাকস্থলী খাবার হজম করতে সময় নেয়। অপরিপক্ব হজম প্রক্রিয়ার কারণে দুধ বা অন্যান্য উপাদান সম্পূর্ণ হজম না হলে গ্যাস তৈরি হতে পারে। |
দুধের সংবেদনশীলতা বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স | কিছু শিশু মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধের কিছু উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। বিশেষ করে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে শিশুর পেটে গ্যাস জমতে পারে, যার ফলে সে অস্বস্তি বোধ করতে পারে। |
মায়ের খাদ্যাভ্যাস | যেহেতু নবজাতক মায়ের দুধ পান করে, তাই মায়ের খাদ্যাভ্যাস তার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। মায়ের খাওয়া কিছু খাবার যেমন—ডাল, বাঁধাকপি, ব্রকলি, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি শিশুর জন্য গ্যাসের কারণ হতে পারে। |
অতিরিক্ত খাওয়া বা দ্রুত খাওয়া | যদি নবজাতক খুব বেশি পরিমাণে খায় বা দ্রুত দুধ পান করে, তাহলে তার পাকস্থলী অতিরিক্ত খাবার ধারণ করতে পারে না এবং হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। |
অতিরিক্ত কান্না করা | নবজাতক যখন দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করে, তখন তার শরীরে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে, যা পরে পেটে গ্যাসের আকারে জমা হয় এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে। |
অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ফর্মুলা দুধ তৈরি করা | যদি ফর্মুলা দুধ সঠিক অনুপাতে তৈরি না করা হয়, তবে এটি শিশুর হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং গ্যাসের কারণ হতে পারে। |
অলস অন্ত্রক্রিয়া | কিছু শিশুর অন্ত্রধারণ ক্ষমতা তুলনামূলক ধীরগতির হয়, যার ফলে খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং গ্যাস উৎপন্ন হয়। |
উল্লেখিত কারণগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, নবজাতকের পেট ফাঁপার সমস্যা মূলত হজম সংক্রান্ত কারণের ওপর নির্ভর করে। তবে সঠিকভাবে কারণ চিহ্নিত করা গেলে এই সমস্যার সমাধান করাও সহজ হয়ে যায়।
বাচ্চাদের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও, এটি তাদের অস্বস্তি এবং কান্নার কারণ হতে পারে। তবে কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া উপায় আছে, যেগুলি বাচ্চাদের পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ উপায় তুলে ধরা হলো—
পেট ম্যাসাজ
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস জমে গেলে, তাদের পেট নরমভাবে ম্যাসাজ করলে গ্যাস বের হতে সাহায্য করে। আপনি পেটের মাঝখানে ঘূর্ণায়মানভাবে হাত চালাতে পারেন, যা শিশুর পেটের গ্যাস মুক্ত করতে সহায়ক হতে পারে।
গরম সেঁক
গ্যাসের কারণে পেট ফুলে গেলে, গরম সেঁক দিয়ে শিশুদের আরাম দেয়া যায়। একটি গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে পেটের উপর প্রয়োগ করলে পেটের মধ্যে জমে থাকা গ্যাস বের হতে সাহায্য করবে। তবে, সেঁক দেওয়ার সময় খুব বেশি গরম হতে পারে, তাই সাবধানে ব্যবহার করুন।
পা সাইকেলের মতো নাড়ানো
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস জমে গেলে, তাদের পা সাইকেলের মতো নাড়ানোর চেষ্টা করুন। এটি একটি কার্যকর উপায়, যা গ্যাস মুক্ত করতে এবং শিশুর পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পানি বা চা
বাচ্চাদের পানির পরিমাণ বাড়ানো গ্যাস সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ছোট ছোট পরিমাণে পানি বা গরম আদা চা (যদি বয়স উপযুক্ত থাকে) শিশুদের গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, বড়োদের জন্য ব্যবহৃত মশলা বা ঔষধের পরিমাণ ছোট শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়।
সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়ানো
বাচ্চাদের খুব দ্রুত বা বেশি পরিমাণে খাওয়ানো গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাদের সঠিকভাবে এবং ধীরেসুস্থে খাওয়ানো উচিত, যাতে অতিরিক্ত বাতাস না প্রবাহিত হয়।
গ্যাস শোধক তেল
বাজারে গ্যাস শোধক তেল পাওয়া যায়, যা বাচ্চাদের পেটে ম্যাসাজ করতে সহায়ক। এই তেল সাধারণত বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ এবং এতে গ্যাসের সমস্যা কমানোর উপাদান থাকে।
খাবারে পরিবর্তন
বাচ্চাদের যদি পেট ফাঁপার সমস্যা বেশি হয়, তাহলে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হতে পারে। গ্যাস তৈরির জন্য পরিচিত খাবার, যেমন—বাঁধাকপি, কপি, মটরশুঁটি ইত্যাদি কিছু সময়ের জন্য বাদ দেওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত কান্না কমানো
বাচ্চারা যদি অতিরিক্ত কান্না করে, তা তাদের পেটে বাতাস প্রবাহিত করতে পারে এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করুন এবং যেকোনো কারণেই কান্না হলে তা সমাধান করার চেষ্টা করুন।
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
যদি বাচ্চার পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা অত্যন্ত গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এই সহজ এবং নিরাপদ ঘরোয়া উপায়গুলো বাচ্চাদের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি সমস্যা বেশি তীব্র হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত
বাচ্চাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার, তবে এটি তাদের অস্বস্তি এবং কান্নার কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা কমাতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও পানীয় রয়েছে, যা বাচ্চাদের জন্য উপকারী। প্রথমত, আদা একটি প্রাকৃতিক গ্যাস শোধক হিসেবে কাজ করে।
আদা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে এবং হজমের প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়ক। তবে, ছোট বাচ্চাদের জন্য আদা চা বা আদা পানি খুবই সামান্য পরিমাণে দিতে হবে (বিশেষ করে ৬ মাস বয়সের উপরে)। আদা গ্যাস কমানোর পাশাপাশি বাচ্চাদের পেটের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।
পানি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পেটের গ্যাস কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করানো খুবই জরুরি। পানি হজম প্রক্রিয়া সহায়ক এবং গ্যাস মুক্তি দেওয়ার জন্য কার্যকর। তাই বাচ্চাকে দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করানো উচিত।
এছাড়াও, পাকা কলা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রাকৃতিক ফাইবার রয়েছে, যা হজমের জন্য উপকারী। এটি পেটের গ্যাস কমাতে সহায়ক এবং শিশুর পেটে অস্বস্তি দূর করে।
সেদ্ধ আপেল বা গাজর বাচ্চাদের জন্য একটি আদর্শ খাবার, কারণ এগুলি সহজে হজম হয় এবং পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। সেদ্ধ শাকসবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি ইত্যাদি খুবই উপকারী, কারণ এগুলি পেটের জন্য মৃদু এবং গ্যাস কমাতে সহায়ক।
এছাড়া, সাদা চালের খিচুড়ি একটি হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার, যা পেটে গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি সহজে হজম হয় এবং পেটের গ্যাস মুক্ত করতে সহায়ক।
আরেকটি কার্যকর উপায় হল পানি দিয়ে সেদ্ধ করা আলু। আলু সেদ্ধ করে খেলে পেটে অস্বস্তি কমে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। তবে, বাচ্চার খাদ্য তালিকায় আলু দেয়া হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশি তেল বা মশলা না দেয়া হয়।
এর পাশাপাশি, গরম দুধ (যদি বাচ্চার বয়স উপযুক্ত হয়) গ্যাস কমাতে সহায়তা করতে পারে, তবে কিছু বাচ্চার দুধ পানে গ্যাস হতে পারে, সেক্ষেত্রে দুধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত।
দই একটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক, যা পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং হজমের প্রক্রিয়া সহজ করে। এটি পেটের গ্যাস কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে শুধুমাত্র বাচ্চার বয়স এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এটি দেয়া উচিত।
অন্যদিকে, কিছু খাবার বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই, গ্যাস তৈরি করা খাবার যেমন বাঁধাকপি, কপি, মটরশুঁটি ইত্যাদি থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখা উচিত, কারণ এসব খাবার গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, মিষ্টি খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের গ্যাস সমস্যা বাড়তে পারে, এবং টক জাতীয় খাবারও গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। তাই এসব খাবার থেকে বাচ্চাকে বিরত রাখা উচিত।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখে এবং পেটের গ্যাস সমস্যা দূর করার জন্য এই ঘরোয়া উপায়গুলি কার্যকর হতে পারে। তবে, যদি বাচ্চার গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তাহলে পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
নবজাতকের পেট ফুলে গেলে করণীয়
নবজাতকের পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা সাধারণত গ্যাস বা হজমের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও, এর থেকে শিশুর অস্বস্তি বা যন্ত্রণা হতে পারে। তাই, যখন নবজাতকের পেট ফাঁপার লক্ষণ দেখা দেয়, তখন তা অবহেলা না করে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে শিশুর পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে আরাম দেওয়া সম্ভব।
খাওয়ানোর পর ব্রপিং বা গ্যাস বের করা
শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর, যতটা সম্ভব তাকে বায়ু প্রবাহিত না হওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে সোজা অবস্থায় ধরে রাখা এবং তার পিঠে হালকা চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, যাতে পেটের ভিতরের গ্যাস বের হতে পারে। এতে শিশুর পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা কমতে সাহায্য করে।
শিশুকে উল্টো করে শোয়ানো বা কোমর দিয়ে নাচানো
কিছু ক্ষেত্রে, শিশুকে উল্টো করে শুইয়ে বা কোমরের নিচে হাত দিয়ে হালকা নাচানোর মাধ্যমে পেটের গ্যাস বের করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া শিশুর পেটের চাপ কমাতে এবং গ্যাস বের হতে সাহায্য করতে পারে। এটি শিশুর অস্বস্তি কমাতে একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি নবজাতকের পেট ফাঁপা সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তাকে অতিরিক্ত যন্ত্রণা দিচ্ছে, তবে পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত। কখনও কখনও, শিশুর পেটে গ্যাস জমা হওয়া বা পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা অন্য কোন স্বাস্থ্যজনিত কারণে হতে পারে, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এসব পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সমাধান করা যায়।
এই সহজ এবং ঘরোয়া উপায়গুলি শিশুর পেট ফাঁপা সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে সমস্যা যদি স্থায়ী হয় বা বাড়তে থাকে, তবে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে করণীয়
নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে গেলে, এটি তাকে অস্বস্তি ও কান্নার কারণ হতে পারে। তবে পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যাটি খুব সাধারণ, এবং কিছু ঘরোয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর পদ্ধতি আলোচনা করা হলো, যা নবজাতকের পেটে গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে—
ব্রপিং (Belching)
শিশু দুধ খাওয়ার পর বাতাস গিলে ফেলতে পারে, যা পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর পেটের গ্যাস বের করার জন্য ব্রপিং (বেলচিং) করানো জরুরি। দুধ খাওয়ার পর শিশুকে উল্লম্ব অবস্থায় ধরে তাকে একটু হালকা ট্যাপ করতে পারেন, যা বাতাস বের করার জন্য সহায়ক হতে পারে।
পা সাইকেলের মতো নাড়ানো
নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে গেলে, পা সাইকেলের মতো নাড়ানো তাকে স্বস্তি দিতে পারে। শিশুকে পিঠে শোয়ানোর পর তার পা সাইকেলের মতো নাড়ানোর চেষ্টা করুন, যাতে গ্যাস বের হতে সাহায্য হয়।
গরম কাপড় দিয়ে কোমরে সেঁক দেওয়া
শিশুর পেটে গ্যাস জমলে কোমরের নিচে গরম কাপড় সেঁক দিয়ে অস্বস্তি দূর করা যেতে পারে। তবে, গরম কাপড় সরাসরি ত্বকে না দিয়ে একটি পাতলা কাপড়ের ওপর এটি ব্যবহার করুন। এটি পেটের গ্যাস কমাতে এবং স্বস্তি দিতে সাহায্য করে।
শিশুকে অস্থির না করার চেষ্টা করা
শিশুর পেটে গ্যাস জমলে সে অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। তাই শিশুকে শান্ত রাখা জরুরি। তাকে চুপচাপ শোয়াতে চেষ্টা করুন এবং এক জায়গায় নাড়িয়ে না রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় বিশ্রাম নিতে দিন।
দুধ খাওয়ার সময় ধীরেসুস্থে খাওয়ানো
দুধ পান করার সময় শিশুর পেটে অতিরিক্ত বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। তাই তাকে ধীরে ধীরে খাওয়াতে চেষ্টা করুন এবং যাতে শিশুর মুখের ওপর সঠিকভাবে স্তন্যপান হয় তা নিশ্চিত করুন।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা
গরম বা ঠান্ডা উভয় অবস্থাতেই পেটে গ্যাস বাড়তে পারে। শিশুকে পর্যাপ্ত সঠিক তাপমাত্রা দেয়ার চেষ্টা করুন যাতে তার শরীর আরামদায়ক থাকে।
দুধের ধরন পরিবর্তন করা
যদি শিশুর পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা বার বার ঘটে, তবে মায়ের দুধে সমস্যা না থাকলেও ফর্মুলা দুধের পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিছু শিশু বিভিন্ন ধরনের ফর্মুলা দুধে সংবেদনশীল হতে পারে।
শিশুকে নিয়মিত ফিডিং করা
অনেক সময় দীর্ঘ সময় ফিডিং না করার ফলে শিশুর পেটে গ্যাস জমে যেতে পারে। তাকে নিয়মিত ছোট পরিমাণে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
পেট ম্যাসেজ করা
শিশুর পেটে গ্যাস জমলে, পেটের নরম ম্যাসাজ করা যেতে পারে। শিশুদের জন্য বাজারে বিশেষ পেট ম্যাসাজ অয়েল পাওয়া যায়, যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
যদি নবজাতকের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে চলে বা কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত শিশুর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে নবজাতকের পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। তবে, যদি সমস্যাটি তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুন : শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা ভালো? কমে গেলে করণীয়!
আরো পড়ুন : সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে? হলে করণীয় কি
আমাদের কথা
আমরা জানি যে একটি শিশুর যত্ন নেওয়া বাবা-মায়ের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকা আমাদের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। শিশুর পেট ফাঁপা বা অন্য কোন শারীরিক অস্বস্তি হওয়ার সময় বাবা-মায়েরা অনেক সময় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন।
তাই, আমরা এখানে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিগুলির ওপর আলোচনা করেছি যা শিশুর পেট ফাঁপা থেকে রেহাই পেতে সহায়ক হতে পারে।
আমাদের লক্ষ্য হল নতুন বাবা-মায়েদের এই ধরনের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা এবং তাদেরকে সর্বোত্তম উপায় প্রদান করা, যাতে শিশুর সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবন নিশ্চিত হয়। আমরা সবসময় শিশুর স্বাস্থ্য ও ভালোবাসা পূর্ণ পরিচর্যাকে গুরুত্ব দিই এবং সেজন্য সর্বোত্তম তথ্য ও গাইডলাইন শেয়ার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আপনার শিশুর সুরক্ষিত এবং সুস্থ থাকার জন্য যেকোনো প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সর্বদা এখানে আছি আপনাদের সহায়তা করতে।
FAQ
নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে কী করতে হবে?
নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে, তাদের পেট হালকাভাবে ম্যাসেজ দেওয়া বা পেটের দিকে সোজা করে ধরলে গ্যাস বের হতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, গ্যাস মুক্ত করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যাক রোলিং বা খাওয়ার পর একটু সময় ধরে পিঠে হালকা ট্যাপ করে সাহায্য করা যেতে পারে।
কী খেলে পেট ফোলা কমবে?
পেট ফোলা কমাতে বেশি করে তরল খাবার এবং সহজে পাচ্য খাদ্য যেমন সেদ্ধ চাল, ডাল, সিদ্ধ সবজি, কলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এছাড়া, মধু বা আদা চা ও গরম পানির সেঁক পেট ফোলা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ছোট বাচ্চাদের পেট ফুলে যাওয়ার কারণ কী?
ছোট বাচ্চাদের পেট ফুলে যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে গ্যাসের সৃষ্টি, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অথবা তাদের পাচনতন্ত্রের অস্বস্তি। এছাড়া, কখনও কখনও বাচ্চাদের খাওয়ার পর বাতাস গেলা বা ল্যাকটোজ অ্যালার্জির কারণে পেট ফুলে যেতে পারে।
নবজাতকের পেটে আওয়াজ হয় কেন?
নবজাতকের পেটে আওয়াজ হতে পারে খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার কারণে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক এবং কোনও গুরুতর সমস্যা নয়, তবে যদি অন্য উপসর্গ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পেট ফেঁপে গেলে কী করতে হবে?
পেট ফেঁপে গেলে গ্যাস বের করার জন্য পেটের দিকে সোজা করে শোয়া বা হালকা ম্যাসেজ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, গরম পানি দিয়ে সেঁক দেওয়া বা আদা চা পানে উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
কলা খেলে কি গ্যাস হয়?
কলায় পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকার কারণে, কিছু মানুষের পেটে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। তবে, কলা সাধারণত পেটের জন্য উপকারী এবং গ্যাস সমস্যা হলে একাধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম কী?
বাচ্চাদের পেট ফাঁপার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে যেমন সিমিথিকন (Simethicone) জাতীয় প্রস্তুতি। তবে, ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মায়ের খাবার কি শিশুর গ্যাসের উপর প্রভাব ফেলে?
হ্যাঁ, মায়ের খাবার শিশুর গ্যাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি মা পেঁয়াজ, ব্রকলি, দুধজাত খাবার বা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খান, তখন তা শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
নবজাতকের পেট বড় হওয়ার কারণ কী?
নবজাতকের পেট বড় হওয়ার একাধিক কারণ হতে পারে, যেমন গ্যাসের সঞ্চয়, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাচনতন্ত্রের অস্বস্তি। এটি সাধারণত কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়, তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কত বছর বয়সে বাচ্চার পেট বাড়ে?
বাচ্চার পেট সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে বাড়তে শুরু করে, কারণ এ সময়ে তাদের পাচনতন্ত্র পরিপক্ব হতে থাকে এবং তারা কঠিন খাবার খাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে, এটা শিশুর শারীরিক গঠন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
7 thoughts on “নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত জানুন”