নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়

নবজাতকের নাভি জন্মের পরপরই বিশেষ যত্নের প্রয়োজন, কারণ এটি সঠিকভাবে শুকানো না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। অনেক নতুন মা-বাবার মনে প্রশ্ন জাগে, নবজাতকের নাভির যত্ন কীভাবে নেবেন এবং কতদিনে এটি স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যাবে। 

সাধারণত জন্মের পর কাটা নাভির অবশিষ্ট অংশ কয়েক দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যায়, তবে সঠিক পরিচর্যা না করলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই, নবজাতকের নাভি দ্রুত ও নিরাপদে শুকানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা জরুরি।

আজকের ব্লগে আমরা নবজাতকের নাভি শুকানোর কার্যকর উপায় ও সতর্কতাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

নবজাতকের নাভি কাটার নিয়ম

নবজাতকের নাভি কাটার নিয়ম

নবজাতকের জন্মের পর নাভি কাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়া, যা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সাধারণত প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স বা ধাত্রী নবজাতকের নাভি কাটার কাজটি সম্পন্ন করেন।

জন্মের পর শিশুর নাভিরজ্জু (umbilical cord) মায়ের শরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা শিশুকে গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করত। প্রসবের পর এটি দ্রুত এবং নিরাপদ উপায়ে কেটে আলাদা করা হয়, যাতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

নবজাতকের নাভি কাটার সময় প্রথমে নাভিরজ্জুর নির্দিষ্ট দুটি স্থানে জীবাণুমুক্ত চিমটা (clamp) বা সুতা দিয়ে বাঁধা হয়, যাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ থাকে। এরপর দুটি বাঁধার মাঝামাঝি অংশ জীবাণুমুক্ত কাঁচি বা ব্লেড ব্যবহার করে সাবধানে কেটে ফেলা হয়। 

কাটা অংশের চারপাশ জীবাণুমুক্ত করা হয়, যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ না হয়। নাভি কাটার পর নবজাতকের নাভির শুকানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া হয়। সাধারণত ৭-১৫ দিনের মধ্যে নবজাতকের নাভির অবশিষ্ট অংশ শুকিয়ে পড়ে যায়।

নবজাতকের নাভি কাটার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এটি কাটার জন্য অবশ্যই জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে এবং নাভি কাটার পরপরই স্থানটি পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে, যাতে কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে। 

যদি নাভির চারপাশে লালচে দাগ, দুর্গন্ধ, পুঁজ বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে নবজাতকের নাভির শুকানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা যায় এবং শিশুকে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

 

নবজাতকের নাভির যত্ন

নবজাতকের নাভির যত্ন

নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জন্মের পর ধীরে ধীরে শুকিয়ে পড়ে এবং যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা না হয়, তবে ইনফেকশনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

জন্মের পর কাটা নাভির অবশিষ্ট অংশ সাধারণত ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যায়, তবে এই সময়ের মধ্যে সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করা জরুরি। 

নবজাতকের নাভি সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখা উচিত, যাতে এটি দ্রুত ও সংক্রমণমুক্তভাবে শুকিয়ে যেতে পারে। শিশুকে গোসল করানোর সময় নাভি ভিজিয়ে না দেওয়া উত্তম, কারণ অতিরিক্ত আর্দ্রতা নাভির শুকানোর প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে।

নাভির যত্ন নেওয়ার সময় নরম ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ময়লা বা আর্দ্রতা জমে না থাকে। অনেকেই মনে করেন, অ্যালকোহল বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করলে নাভি দ্রুত শুকাবে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব রাসায়নিক পদার্থ নাভির স্বাভাবিক শুকানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 

তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ বা রাসায়নিক ব্যবহার করা উচিত নয়।

নবজাতকের ডায়াপার পরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন এটি নাভির ওপর চাপ সৃষ্টি না করে। 

বর্তমানে বাজারে নাভি-বান্ধব ডায়াপার পাওয়া যায়, যা নাভির চারপাশ খোলা রাখার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। শিশুর পোশাকও ঢিলেঢালা হওয়া উচিত, যাতে নাভির আশেপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

নবজাতকের নাভির যত্ন নিতে হলে সংক্রমণের লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। যদি নাভির চারপাশ লাল হয়ে যায়, দুর্গন্ধ বের হয়, পুঁজ দেখা যায় বা অতিরিক্ত ফুলে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

সাধারণত, ৭-১৫ দিনের মধ্যে নাভি শুকিয়ে পড়ে যায়, তবে ১৫ দিনের বেশি সময় লাগলে বা কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নবজাতকের নাভি নিরাপদে শুকানো সম্ভব, যা শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়

নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়

নবজাতকের নাভি জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে পড়ে, তবে এটি দ্রুত ও সংক্রমণমুক্তভাবে শুকানোর জন্য সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

সাধারণত, নবজাতকের নাভির অবশিষ্ট অংশ ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে, তবে এই সময়ের মধ্যে নাভিকে পরিষ্কার ও শুকনো রাখা জরুরি। 

নবজাতকের নাভি যত তাড়াতাড়ি শুকাবে, সংক্রমণের ঝুঁকি তত কমবে। অনেক নতুন বাবা-মা নাভির যত্ন সম্পর্কে সচেতন না থাকলে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে নাভি শুকানোর প্রক্রিয়াকে সহজ ও নিরাপদ করা সম্ভব।

নবজাতকের নাভি শুকানোর জন্য প্রথমেই শুষ্কতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। গোসলের সময় নাভি ভিজতে দেওয়া উচিত নয়, বরং স্পঞ্জ বাথ বা গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় দিয়ে শিশুর শরীর পরিষ্কার করাই উত্তম। 

নাভির চারপাশ যদি ভিজে যায়, তবে তা নরম ও পরিষ্কার কাপড়ে আলতোভাবে মুছে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত আর্দ্রতা নাভির শুকানোর প্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

অনেকে মনে করেন, অ্যালকোহল বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করলে নাভি দ্রুত শুকাবে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব রাসায়নিক পদার্থ নাভির স্বাভাবিক শুকানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 

তাই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা উচিত নয়। নাভির যত্নের জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো এটি স্বাভাবিকভাবে শুকানোর সুযোগ দেওয়া।

ডায়াপার পরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন এটি নাভির ওপর চাপ সৃষ্টি না করে এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ পায়। অনেক ডায়াপার ব্র্যান্ড এখন নাভি-বান্ধব ডিজাইন তৈরি করেছে, যা শিশুর নাভিকে ঢেকে ফেলে না এবং শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে। 

এছাড়া, শিশুকে এমন ঢিলেঢালা পোশাক পরানো উচিত, যাতে নাভির ওপর কোনো অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

নবজাতকের নাভি শুকানোর সময় ইনফেকশনের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। যদি নাভির চারপাশে লালচে হয়ে যায়, দুর্গন্ধ বের হয়, পুঁজ দেখা যায় বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

 

নবজাতকের নাভি শুকানোর পাউডার

নবজাতকের নাভি শুকানোর পাউডার

নবজাতকের নাভি দ্রুত শুকানোর জন্য অনেক বাবা-মা নাভি শুকানোর পাউডার ব্যবহার করার কথা ভাবেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, নবজাতকের নাভিতে সাধারণত কোনো অতিরিক্ত পাউডার বা ওষুধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। 

নাভি স্বাভাবিকভাবেই ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে, এবং এটি নিরাপদভাবে শুকানোর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শুষ্কতা বজায় রাখা ও পরিষ্কার রাখা।

অনেকে বাজারে পাওয়া অ্যান্টিসেপটিক বা মেডিকেল পাউডার নাভির ওপরে ছিটানোর পরামর্শ দেন, তবে এগুলো সবসময় উপকারী নয়। কিছু পাউডার নাভির প্রাকৃতিক শুকানোর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং কখনো কখনো অতিরিক্ত আর্দ্রতা তৈরি করে, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

নবজাতকের নাভি শুকানোর জন্য পাউডার ব্যবহারের আগে যা জানতে হবে

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাউডার ব্যবহার করবেন না – অনেক বাবা-মা জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য পাউডার ব্যবহার করতে চান, তবে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

প্রাকৃতিকভাবে নাভি শুকানোর সুযোগ দিন 

 নবজাতকের নাভি পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।

অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে

পাউডার জমে গেলে নাভির চারপাশে আর্দ্র পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

ইনফেকশনের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন  

যদি নাভির চারপাশ লালচে হয়ে যায়, দুর্গন্ধ বের হয় বা পুঁজ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

নবজাতকের নাভিতে ইনফেকশন হলে করণীয়

নবজাতকের নাভিতে ইনফেকশন হলে করণীয়

নবজাতকের নাভি সাধারণত জন্মের ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে, তবে এই সময়ে সঠিক যত্ন না নিলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যদি নাভির চারপাশ লালচে হয়ে যায়, দুর্গন্ধ বের হয়, পুঁজ জমে, ফোলা দেখা যায় বা নবজাতক অতিরিক্ত কাঁদে, তাহলে এটি নাভির সংক্রমণের (Omphalitis) লক্ষণ হতে পারে।

এই অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুর জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই নবজাতকের নাভিতে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে নিচের করণীয়গুলো অনুসরণ করা জরুরি।

নবজাতককে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান

যদি নাভিতে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় নাভির সংক্রমণ তীব্র হলে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক বা বিশেষ ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

নাভিকে পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন

নাভির চারপাশ সবসময় শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখা জরুরি। ভিজে গেলে একটি নরম ও জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছুন। নাভিতে কোনো অতিরিক্ত আর্দ্রতা জমতে দিলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হতে পারে।

অ্যান্টিসেপটিক বা ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

অনেক সময় অভিভাবকরা অ্যান্টিসেপটিক বা ঘরোয়া উপায়ে পাউডার, হলুদ বা মলম লাগাতে চান, যা বিপজ্জনক হতে পারে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

নাভির আশেপাশে ডায়াপার বা পোশাকের চাপ কমান

নবজাতকের পোশাক বা ডায়াপার যাতে নাভির সংক্রমিত অংশের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ডায়াপারের ঘর্ষণে নাভিতে সংক্রমণ বাড়তে পারে।

নবজাতকের আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন

যদি নবজাতক অতিরিক্ত কান্না করে, খাওয়া কমিয়ে দেয় বা জ্বর আসে, তাহলে এটি ইনফেকশন গুরুতর হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এমন হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ইনফেকশনের লক্ষণ করণীয়
নাভির চারপাশ লালচে হওয়া বা ফোলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং দ্রুত হাসপাতালে যান
নাভি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বা পুঁজ বের হওয়া নাভির চারপাশ পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন
নবজাতকের শরীরে জ্বর আসা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করবেন না
শিশুর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কান্না করা বা অস্বস্তি বোধ করা নবজাতকের পোশাক বা ডায়াপার যাতে নাভির ওপর চাপ না ফেলে তা নিশ্চিত করুন
নাভির আশেপাশের ত্বক শক্ত বা গরম হয়ে যাওয়া শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন এবং গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

 

নবজাতকের নাভি না শুকালে করণীয়

নবজাতকের নাভি না শুকালে করণীয়

নবজাতকের নাভি সাধারণত জন্মের ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে। তবে যদি নাভি দীর্ঘদিন ধরে ভিজে থাকে, পানি বা হলুদ রঙের তরল বের হয়, দুর্গন্ধ থাকে বা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় নেয়, তাহলে এটি সমস্যা হতে পারে। নাভি না শুকানোর কারণ হতে পারে সংক্রমণ, অতিরিক্ত আর্দ্রতা, বা জন্মগত কিছু সমস্যা। নিচে করণীয় বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

নবজাতকের নাভি না শুকানোর কারণ ও করণীয় :-

সমস্যার ধরন লক্ষণ করণীয়
স্বাভাবিকভাবে নাভি শুকাতে দেরি হচ্ছে । ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে নাভি ভিজে থাকছে কিন্তু কোনো দুর্গন্ধ বা লালচে ভাব নেই। নাভি শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখুন, ভিজে গেলে তুলার সাহায্যে আলতোভাবে মুছুন। অতিরিক্ত নাড়াচাড়া করবেন না।
নাভিতে আর্দ্রতা জমছে বা তরল বের হচ্ছে নাভি ভিজে থাকে, সামান্য পানি বা হলুদ রঙের তরল বের হয়, তবে তেমন দুর্গন্ধ নেই। দিনে ২-৩ বার জীবাণুমুক্ত গজ বা পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। নাভি শুকনো রাখার জন্য টাইট পোশাক ও ডায়াপার এড়িয়ে চলুন।
নাভি থেকে দুর্গন্ধ বা পুঁজ বের হচ্ছে (নাভির সংক্রমণ – Omphalitis) দুর্গন্ধ, লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া, পুঁজ বের হওয়া, জ্বর বা শিশুর অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
নাভির গ্রানুলোমা (Umbilical Granuloma) নাভির শুকনো অংশের নিচে গোলাপি রঙের ছোট মাংসল অংশ গঠন হয়েছে, তরল নিঃসরণ হচ্ছে। এটি জন্মগত সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে নুনের প্রলেপ দেওয়া বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
নাভির হার্নিয়া (Umbilical Hernia) নাভির অংশটি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা ফোলা, চাপ দিলে নরম মনে হয়। এটি সাধারণত নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। তবে শিশু ২-৩ বছর পর্যন্ত সুস্থ না হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

নবজাতকের নাভি শুকানোর ঔষধ

নবজাতকের নাভি শুকানোর ঔষধ

নবজাতকের জন্মের পর নাভির গোড়া খুব সংবেদনশীল থাকে। এটি সঠিকভাবে শুকানো না হলে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই, নাভির সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবজাতকের নাভি সাধারণত জন্মের ৫-১৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে পড়ে যায়। এই সময়ে নাভিকে সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখা উচিত।

নবজাতকের নাভি দ্রুত শুকানোর জন্য কিছু ঔষধ ও অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।

সাধারণত ব্যবহৃত কিছু ঔষধ হলো অ্যান্টিসেপটিক পাউডার বা লোশন, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নাভির চারপাশে হালকা করে প্রয়োগ করা হয়।

এছাড়া, বেটাডিন সলিউশন জীবাণুনাশক হিসেবে কার্যকরী হলেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শ দিলে স্পিরিট (Alcohol Swab) অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কিছু ঘরোয়া উপায়েও নবজাতকের নাভি দ্রুত শুকানো সম্ভব। যেমন, প্রতিবার গোসলের পর নরম কাপড় দিয়ে নাভি শুকিয়ে নিতে হবে এবং নবজাতকের পোশাক এমন হওয়া উচিত যেন নাভি পর্যাপ্ত বাতাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের দুধের কয়েক ফোঁটা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এবং দ্রুত শুকানোর সহায়তা করে।

যদি নবজাতকের নাভির চারপাশে লালচে ভাব, পুঁজ বের হওয়া, বা দুর্গন্ধ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সংক্রমণের ফলে জ্বর বা বিরক্তিভাব দেখা দিলে সেটি আরও গুরুতর হতে পারে। 

নবজাতকের নাভি সঠিকভাবে শুকানো এবং পরিচর্যার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কোনো ধরনের ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণই নবজাতকের সুস্থতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন : নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়

আরো পড়ুন : নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত জানুন

আরো পড়ুন : শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা ভালো? কমে গেলে করণীয়!

আমাদের কথা

নবজাতকের যত্ন নিয়ে অনেক বাবা-মায়ের মনে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ থাকে, বিশেষ করে নবজাতকের নাভির সঠিক পরিচর্যা নিয়ে। আমাদের লক্ষ্য হলো সঠিক তথ্য ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক পরামর্শের মাধ্যমে নতুন অভিভাবকদের সহায়তা করা, যাতে তারা তাদের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন।

আমাদের এই ব্লগে আপনি নবজাতকের নাভির পরিচর্যা, শুকানোর পদ্ধতি, ইনফেকশনের লক্ষণ, ওষুধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন। প্রতিটি তথ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে যাচাই করা এবং নবজাতকের সুস্থ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা বিশ্বাস করি, সচেতনতা ও সঠিক যত্নই শিশুর সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। তাই, নবজাতকের যত্ন নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং সঠিক তথ্য অনুসরণ করুন।

 

FAQ 
  • নাভি কিভাবে সুন্দর করব?
    শিশুর নাভিকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে নাভি সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখা জরুরি। অতিরিক্ত আর্দ্রতা জমতে দেওয়া উচিত নয়, এবং টাইট পোশাক বা ডায়াপার এড়িয়ে চলা ভালো, যাতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো রাসায়নিক বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়।

 

  • শিশুর নাভি কত দিনে শুকায়?
    সাধারণত নবজাতকের নাভির অবশিষ্ট অংশ জন্মের পর ৭-১৫ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে। তবে এটি শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।

 

  • বাচ্চার নাভি ফোলার কারণ কি?
    নাভি ফুলে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে নাভির হার্নিয়া, ইনফেকশন বা নাভির গ্রানুলোমা থাকতে পারে। নাভির হার্নিয়া হলে এটি সময়ের সাথে নিজে থেকে সেরে যেতে পারে, তবে ইনফেকশনের কারণে নাভি ফুলে গেলে দুর্গন্ধ, লালচে ভাব বা পুঁজ দেখা দিতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

  • নবজাতকের নাভিতে সেক দেওয়া যাবে কি?
    নবজাতকের নাভিতে গরম পানির সেক দেওয়া উচিত নয়। এটি নাভির সংবেদনশীল অংশে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নাভি শুকনো রাখা ও নিয়মিত পরিচর্যা করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

 

  • নবজাতকের নাভি পড়ে গেলে কি করতে হয়?
    নাভির অবশিষ্ট অংশ পড়ে গেলে স্থানটি পরিষ্কার ও শুকনো রাখা প্রয়োজন। যদি সামান্য রক্তপাত হয়, তাহলে নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে চেপে ধরা যেতে পারে। তবে নাভি পড়ে যাওয়ার পর দুর্গন্ধ, অতিরিক্ত রক্তপাত বা ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

  • নবজাতককে কতবার গোসল করাতে হয়?
    নবজাতককে সপ্তাহে ২-৩ বার স্পঞ্জ বাথ করানোই যথেষ্ট। নাভি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। শুধু মুখ, হাত, পা ও নিতম্ব নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।