গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি মা ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন বহন করে, যা গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে এই সময়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা এবং কমে গেলে করণীয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা, কম হিমোগ্লোবিনের লক্ষণ ও ঝুঁকি, এবং এটি বাড়ানোর কার্যকর উপায়।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা স্বাভাবিক
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন মা ও শিশুর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা স্বাভাবিক? এর উত্তর হলো গর্ভাবস্থায় সাধারণত হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১১ থেকে ১৪ গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL) থাকা স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে গর্ভধারণের বিভিন্ন পর্যায়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে হিমোগ্লোবিনের স্তর কমপক্ষে ১১ g/dL থাকা জরুরি। এই সময়ে শরীরে রক্তের চাহিদা বেড়ে যায়, কারণ গর্ভের শিশুর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এই মাত্রা সামান্য কমে ১০.৫ g/dL পর্যন্ত হতে পারে, তবে এটি এর নিচে নামলে মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কম থাকলে তা রক্তস্বল্পতার (Anemia) কারণ হতে পারে, যা মাতৃস্বাস্থ্য এবং শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক আছে কি না তা নিশ্চিত করা জরুরি।
“সঠিক পরিমাণ হিমোগ্লোবিন বজায় রাখতে সুষম খাদ্যগ্রহণ, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, এবং প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শমতো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।”
তাই, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং এটি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন মায়ের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL) বা এর নিচে নেমে গেলে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থাকে গুরুতর অ্যানিমিয়া বলে, যা মা এবং গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
“গর্ভাবস্থায় যদি হিমোগ্লোবিন অত্যন্ত কমে যায়, তাহলে মায়ের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যাহত হয়। এর ফলে মা দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এবং অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন। এর পাশাপাশি, গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে এবং অকাল প্রসব বা শিশুর ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
চিকিৎসকেরা রক্ত সঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মায়ের শারীরিক অবস্থা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, এবং গর্ভাবস্থার ধাপ বিবেচনা করেন। প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে মা ও শিশুর সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
তবে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডিম, মাছ, এবং লাল মাংস খাওয়া, সঠিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে গুরুতর অবস্থায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন এড়ানো সম্ভব।
হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা (গ্রাম/ডেসিলিটার)
হিমোগ্লোবিনের (Hemoglobin) মাত্রা বয়স এবং লিঙ্গের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। নিচে বয়স অনুযায়ী হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা দেওয়া হলো:
বয়স/গ্রুপ | স্বাভাবক মাত্রা |
নবজাতক (১-২ দিন) | 14-24 g/dL |
নবজাতক (১ সপ্তাহ) | 13-20 g/dL |
নবজাতক (১ মাস) | 10-18 g/dL |
৬ মাস – ১ বছর | 10.5-14 g/dL |
১-৫ বছর | 11-14 g/dL |
৬-১২ বছর | 11.5-15.5 g/dL |
১৩-১৮ বছর (মেয়ে) | 12-16 g/dL |
১৩-১৮ বছর (ছেলে) | 13-16 g/dL |
প্রাপ্তবয়স্ক নারী | 12-15.5 g/dL |
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ | 13.5-17.5 g/dL |
গর্ভবতী নারী | 11-12 g/dL |
বয়স ৬৫+ (নারী) | 11.7-13.8 g/dL |
বয়স ৬৫+ (পুরুষ) | 12.4-14.9 g/dL |
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন নিশ্চিত করে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাল মাংস, ডিম এবং অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
পাশাপাশি, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন কমলালেবু, আমলকী, লেবু আয়রন শোষণে সহায়ক। এই খাবারগুলো শরীরকে আয়রন গ্রহণে আরও সহায়তা করে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
এছাড়া, ফলিক অ্যাসিডও হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো সম্ভব। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্রকোলি, শিম, এবং সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
কখনো কখনো খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া গেলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালন বা আয়রন ইনজেকশনও প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন যদি খুব কমে যায়, তবে চিকিৎসক এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা দ্রুত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিকভাবে মনিটর করা গেলে, সমস্যা শনাক্ত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সহজ হয়। রক্ত পরীক্ষা মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া আগে থেকেই জানানো যায়, যা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পানির মাত্রা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে হাইড্রেট রাখলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে এবং মায়ের শরীরে শক্তির ঘাটতি কমে যায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশ্রাম নেওয়া গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে মায়ের শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং অ্যালার্জির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অক্সিজেনের অভাবে শরীরের শক্তি কমে যায়, যা দিনের শেষে অবসাদ এবং শারীরিক অক্ষমতার কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে মায়ের জন্য শারীরিকভাবে কাজ করা বা দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এছাড়া, যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কমে যায়, তবে এটি গর্ভের শিশুর উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। অক্সিজেনের অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং এটি জন্মের সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
“গবেষণায় দেখা গেছে যে, হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, শিশুর জন্মের সময় কম ওজন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।”
অতএব, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে মায়ের এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসক দ্বারা সঠিক পরামর্শ এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো সম্ভব, যা গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং সুস্থভাবে সময় কাটানোর জন্য জরুরি।
আরো পড়ুন : Time management for moms who work from home
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই এই সময়ে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। লাল মাংস, মাংসের অন্ত্র, মুরগি এবং মাছের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। এই খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বাড়ায়।
পাশাপাশি, শাকসবজি যেমন পালং শাক, শিম, মিষ্টি কুমড়া, এবং টমেটো আয়রনের ভালো উৎস। এসব খাবার শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক।
এছাড়া, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভিটামিন সি আয়রন শোষণের জন্য সহায়ক। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কমলালেবু, আমলকী, টমেটো, এবং মরিচের মতো খাবার খাওয়া উচিত। এগুলো আয়রনের শোষণকে দ্রুততর করে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
ফলিক অ্যাসিডও হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য ব্রকোলি, শিম, ডাল, এবং সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত। এগুলো ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ডিম এবং দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে, যা গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়ক। ডিমের মধ্যে ভিটামিন বি১২ এবং আয়রন থাকে, যা রক্ত উৎপাদনে সহায়ক। দুধের মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন থাকলেও, এটি আয়রনের শোষণে সহায়ক।
তুলা, তিসি এবং চিয়া সিডও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে উপকারী। এসব খাবারে আয়রন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবার থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য এগুলো আদর্শ খাবার হতে পারে।
অতএব, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য এই ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে, যদি খাবার থেকে পর্যাপ্ত আয়রন এবং পুষ্টি না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
আমার কথা:
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সঠিকভাবে বজায় রাখা আমাদের মায়ের এবং গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন বহন করে, এটি গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া আমার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং মাথা ঘোরা শুরু হয়েছিল, যার ফলে আমি সাধারণ কাজগুলোও ঠিকভাবে করতে পারছিলাম না। তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে, এটি শুধু আমার স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, গর্ভের শিশুর জন্যও মারাত্মক হতে পারে।
তবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু পুষ্টিকর উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমি নিয়মিত আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে শুরু করেছিলাম, যেমন পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, ডিম, এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যা আমার শরীরকে সাহায্য করেছে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে।
এছাড়াও, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে আমি নিশ্চিত করেছি যে আমার গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রয়েছে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার ফলে এখন আমি অনেক ভালো অনুভব করছি, এবং গর্ভাবস্থায় আমার সুস্থতা নিশ্চিত করতে পেরেছি।
তাহলে, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং সঠিক চিকিৎসার দিকে খেয়াল রাখা অপরিহার্য। এটি শুধু মায়েরই নয়, শিশুরও সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো থাকবেন , আজকে এই পর্যন্তই। আজকের বিষয়ে কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট সেকশন লিখতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমার লিখার আগ্রহ বাড়িয়ে দিবে।
FAQ:
১. গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন যদি ১০ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে চলে যায়, তবে এটি সাধারণত হিমোগ্লোবিনের অভাব বা অ্যানিমিয়া এর লক্ষণ হতে পারে, এবং এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত দিতে হতে পারে। তবে, গর্ভাবস্থায় সাধারণত হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার বা তার উপরে হওয়া উচিত।
২. গর্ভাবস্থায় কি হিমোগ্লোবিন কমে যায়?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। এটি সাধারণত অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি করে, যা মায়ের শরীরে অক্সিজেনের পরিবহন কমিয়ে দেয় এবং তার ফলস্বরূপ ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া মূলত আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাবের কারণে হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে হিমোগ্লোবিন সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা যায় এবং মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৩. এক সপ্তাহে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়?
এক সপ্তাহে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন পালং শাক, মাংস, ডিম, এবং খেজুর খাওয়া উচিত। এছাড়াও, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন সাইট্রাস ফল এবং টমেটো, আয়রনের শোষণ বাড়ায়। ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন শাক-সবজি ও মাংস, হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়ক। আয়রন সাপ্লিমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত?
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ১১-১৪ গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL) হওয়া উচিত। তবে, গর্ভাবস্থায় কিছু মায়ের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে, যা প্রায় ১০ গ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। যদি হিমোগ্লোবিন ১১ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে চলে যায়, তবে তা আয়রন অভাব বা এনিমিয়া নির্দেশ করতে পারে, যা মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।
৫. সি সেকশনে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত?
সি সেকশন (Caesarean Section) বা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সময় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ন। সাধারণভাবে, সিজারের পর মা’দের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১-১২ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত। তবে, অপারেশনের সময় রক্তক্ষরণের কারণে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, প্রয়োজনে আয়রন বা অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৬. গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা শনাক্ত করার জন্য কোন পরীক্ষা করা হয়?
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) শনাক্ত করার জন্য সাধারণত হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা বা রক্তের সেল কাউন্ট (Complete Blood Count – CBC) করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ এবং রক্তের অন্যান্য উপাদান যেমন রেড ব্লাড সেল (RBC), হেমাটোক্রিট, এবং মাইট্রিক্স আউটপুট মূল্যায়ন করা হয়। যদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে, তবে এটি রক্তস্বল্পতার লক্ষণ হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়।
6 thoughts on “গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা ভালো? কমে গেলে করণীয়!”