গর্ভাবস্থায় একটি মা ও অনাগত শিশুর জন্য সুস্থ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই আসে, বিশেষ করে প্রথমবার মা হতে যাওয়া নারীদের মধ্যে। কারণ, কিছু সাধারণ অভ্যাস বা কাজ এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মা ও শিশুর জন্য।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে জানাবো কোন কোন কাজ গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত, কেন তা ক্ষতিকর হতে পারে এবং কীভাবে আপনি নিরাপদ মাতৃত্বের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর দেহ ও মন দুই-ই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময়ে কিছু ভুল অভ্যাস বা কাজ গর্ভপাত, শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা বা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। নিচে গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ তুলে ধরা হলো:
১. ভারী জিনিস তোলা
গর্ভাবস্থায় ভারী কিছু তুললে পেটের পেশিতে চাপ পড়ে এবং গর্ভফুল খসে পড়তে পারে। এতে গর্ভপাত বা সময়ের আগে সন্তান প্রসবের ঝুঁকি থাকে।
২. ধূমপান ও ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে থাকা
ধূমপানে থাকা নিকোটিন ও টক্সিন গর্ভস্থ শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে শিশুর ওজন কম হওয়া, জন্মগত সমস্যা ও এমনকি মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে।
৩. অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
অ্যালকোহল শিশুর ব্রেনের বিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করে। একান্ত প্রয়োজন না হলে চা-কফির পরিমাণও সীমিত রাখা উচিত, কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়ায়।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ
সব ওষুধ গর্ভবতী নারীর জন্য নিরাপদ নয়। ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া ওষুধ খেলে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশে সমস্যা হতে পারে।
৫. কাঁচা বা অপ্রস্তুত খাবার খাওয়া
কাঁচা মাছ, মাংস বা ডিমে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা ফুড পয়জনিং বা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
৬. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম
হালকা ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যায়াম করলে পেটের পেশি টান পড়ে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে ব্যথা, রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। এতে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
৮. মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে যা শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে। তাই গর্ভাবস্থায় মানসিক শান্তি বজায় রাখা জরুরি।
৯. হাই হিল জুতা পরা
হাই হিল ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে, যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত বিপজ্জনক।
১০. গরম পানিতে দীর্ঘ সময় স্নান
বাথটাবে দীর্ঘ সময় গরম পানিতে থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বাধা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কিছু অভ্যাস কেন বিপজ্জনক হতে পারে
গর্ভাবস্থা একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে মায়ের দেহে নানাবিধ শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে।
এই সময়ে প্রতিদিনের কিছু সাধারণ অভ্যাস যেমন ভারি জিনিস তোলা, অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব কিংবা মানসিক চাপ মায়ের শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এসব অভ্যাস গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, এমনকি গর্ভপাত বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ায়।
তদ্ব্যতীত, কিছু অভ্যাস যেমন ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মনোযোগহীন চলাফেরা বা হাই হিল ব্যবহারও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিটি অভ্যাসকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত এবং এমন কোনো কাজ বা আচরণ করা উচিত নয় যা মা বা শিশুর সুস্থতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।
মায়ের দৈনন্দিন জীবনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা
গর্ভাবস্থায় অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন কিছু স্বাভাবিক কাজও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। মায়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে ছোট একটি ভুল অভ্যাসও মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে গর্ভস্থ শিশুর জন্য। নিচের টেবিলটিতে গর্ভাবস্থায় মায়ের জীবনে যেসব কাজ এড়িয়ে চলা উচিত, সেগুলোর একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো, যাতে সচেতনভাবে বিপদ এড়ানো যায়।
কাজের ধরন | সম্ভাব্য ঝুঁকি |
ভারী জিনিস তোলা | ভারী কিছু তোলার ফলে পেটের পেশিতে চাপ পড়ে, গর্ভফুল (placenta) খসে পড়তে পারে, যা গর্ভপাত বা প্রি-টার্ম ডেলিভারির ঝুঁকি তৈরি করে। |
বারবার সিঁড়ি ওঠানামা | অতিরিক্ত সিঁড়ি ওঠানামা ক্লান্তি, হাড়ের উপর চাপ এবং ভারসাম্যহীন অবস্থায় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় ভারসাম্য কমে যাওয়ায় এটি বিপজ্জনক। |
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা | দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে রক্ত জমে যাওয়ার ঝুঁকি, পা ফুলে যাওয়া এবং রক্তচাপের পরিবর্তন হতে পারে। এটি গর্ভবতী নারীর শরীরকে দুর্বল করে তোলে। |
হাই হিল বা অস্বস্তিকর জুতা পরা | হাই হিল পরলে ভারসাম্য হারানোর ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরের ভার কেন্দ্র পরিবর্তিত হয়, ফলে পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। |
অপর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের অভাব | ঘুমের অভাবে মানসিক অবসাদ, দুর্বলতা এবং হরমোন ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, যা শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। |
ঝুঁকিপূর্ণ গৃহস্থালী কাজ (যেমন জানালা ধোয়া, ছাদে ওঠা) | এসব কাজ করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। উচ্চতা থেকে পড়লে তা গর্ভের জন্য মারাত্মক বিপদ তৈরি করতে পারে। |
গরম রান্নাঘরে দীর্ঘ সময় কাটানো | বেশি গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, মাথা ঘোরা বা হিটস্ট্রোক হতে পারে, যা মায়ের ও শিশুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। |
রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার (ব্লিচ, অ্যাসিড ইত্যাদি) | অনেক ক্লিনিং পণ্যে থাকা রাসায়নিক শিশুর বিকাশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। গন্ধ শ্বাসনালিতে সমস্যা বা অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। |
ঝাঁকুনি বা বিপজ্জনক যানবাহনে যাতায়াত | ঝাঁকুনিতে গর্ভাশয়ে চাপ পড়ে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। রুক্ষ রাস্তা বা বাসে চাপাচাপি যাত্রা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। |
ভারসাম্যহীনভাবে বসা বা কাজ করা | ভুলভাবে বসলে কোমর, পিঠ বা পায়ে চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান বা বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। |
গর্ভকালীন সময়ে নিষিদ্ধ খাবার ও পানীয়
গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার নির্বাচন শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, বরং গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার ও পানীয় এই সময়ে একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ভ্রূণের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কিংবা গর্ভপাতের কারণও হতে পারে।
প্রথমত, কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাছ, মাংস এবং ডিম গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলোতে সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া বা টক্সোপ্লাজমা জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা থাকে, যা খাদ্যজনিত রোগের মাধ্যমে মায়ের ও শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এছাড়াও কাঁচা দুধ বা পাস্তুরাইজড নয় এমন দুগ্ধজাত পণ্য খেলে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন যেমন কফি, চা, চকলেট বা সফট ড্রিংকস বাচ্চার ওজন কম হওয়া, প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি বা গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়। একইভাবে, অ্যালকোহল শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং জন্মগত বিকলাঙ্গতা বা FASD (Fetal Alcohol Spectrum Disorders)-এর ঝুঁকি বহন করে।
আরও যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত লবণ বা ঝালযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত বা প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার, কাঁচা সীফুড (sushi) এবং ময়দা বা অতিরিক্ত চিনি যুক্ত মিষ্টান্ন, কারণ এগুলো রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিংবা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
একটি সুস্থ ও ঝুঁকিমুক্ত গর্ভকালীন সময় নিশ্চিত করতে হলে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে পরিমিতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পুষ্টিকর খাবারের উপর জোর দিতে হবে। এবং অবশ্যই যেকোনো খাবার নিয়ে সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও চাপ ব্যবস্থাপনা
গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি একজন নারীর মানসিক অবস্থাও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। এই সময়ে হরমোনের ওঠানামা, দুশ্চিন্তা, দায়িত্ববোধ কিংবা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মিলে অনেক মা মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভোগেন। কিন্তু এ সময় মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ঠিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই প্রভাবশালী গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার উপর।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ গর্ভবতী নারীর শরীরে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বৃদ্ধি করে, যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও ভবিষ্যতের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ শিশুর জন্ম-পরবর্তী আচরণগত সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত কিংবা আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই এই সময়ে মায়েদের উচিত মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন—
প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিট হালকা হাঁটা বা প্রেনাটাল যোগা করা
প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো ও খোলামেলা কথা বলা
মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা
মোবাইল/স্ক্রিন টাইম কমিয়ে বই পড়া বা হালকা সংগীত শোনা
প্রয়োজন হলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
মায়ের শান্ত মন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি শিশুর বিকাশে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় শুধু শরীর নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নও হওয়া উচিত প্রতিদিনের রুটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য মায়ের করণীয় কাজ
একটি সুস্থ ও নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য শুধুমাত্র কিছু কাজ এড়িয়ে চলা যথেষ্ট নয়, বরং কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের প্রতিদিনের সঠিক যত্ন, সুষম খাদ্য, বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তিই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করতে পারে।
প্রথমেই, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেগন্যান্সি চেকআপ করা খুব জরুরি। এতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানা যায় এবং যে কোনো জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা যায়।
পাশাপাশি পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবার খাওয়া, যেমন ফল, সবজি, দুধ, ডিম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম, প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো, এবং শরীর ক্লান্ত লাগলে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেওয়া দরকার। একইসাথে হালকা ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, প্রেনাটাল যোগা) শরীর সচল রাখতে ও ডেলিভারিকে সহজ করতে সহায়ক।
মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, বই পড়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো অত্যন্ত উপকারী। এবং অবশ্যই, ধূমপান, অ্যালকোহল, কাঁচা খাবার ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
পরিশেষে, গর্ভাবস্থাকে একটি স্বাভাবিক ও আনন্দদায়ক সময় হিসেবে গ্রহণ করুন। সঠিক অভ্যাস ও সচেতনতা থাকলে মা ও শিশু দুজনেই থাকবে সুস্থ, নিরাপদ ও শান্তিতে।
আরো পড়ুন : বাচ্চাদের মাথা ঘামার কারণ বিস্তারিত জানুন
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের উপকারিতা এবং সঠিক পদ্ধতি
আরো পড়ুন : নবজাতকের টিকা : নবজাতকের টিকার তালিকা
আরো পড়ুন : নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়
আমাদের কথা
Mom & Kiddy হলো মায়েদের জন্য একটি ভালোবাসা আর যত্নে গড়া প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি পাবেন মাতৃত্ব ও শিশুর সুরক্ষা নিয়ে সত্যিকারের যত্ন আর প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
আমরা বিশ্বাস করি মায়ের স্বাস্থ্য, মানসিক প্রশান্তি ও সচেতনতা একসাথে মিলেই গড়ে ওঠে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। তাই গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে শিশুর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আমরা পাশে থাকতে চাই সহানুভূতির সঙ্গে।
আমাদের প্রতিটি লেখা, টিপস ও পরামর্শ মা ও শিশুর সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েই তৈরি। যেকোনো সন্দেহ, ভয় বা দ্বিধা দূর করে আত্মবিশ্বাসী একজন মা হয়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য।
Mom & Kiddy চায় আপনার মাতৃত্ব হোক স্বাভাবিক, আনন্দময় ও তথ্যভিত্তিক।
আমাদের সঙ্গেই থাকুন শিশু ও মায়ের জন্য একটি ভালো আগামী গড়তে।
FAQ
১. গর্ভবতী অবস্থায় কি কি করা নিষেধ?
গর্ভাবস্থায় ভারী জিনিস তোলা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন, কাঁচা বা অপ্রস্তুত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, হাই হিল পরা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা এবং মানসিক চাপ নেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
২. বাচ্চা পেটে থাকলে কি কি খাওয়া নিষেধ?
কাঁচা মাছ, অর্ধসিদ্ধ মাংস বা ডিম, পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ, অতিরিক্ত ঝাল, লবণযুক্ত খাবার, কাঁচা সীফুড, সফট ড্রিংকস এবং অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিত?
বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ এতে গর্ভস্থ শিশুর রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। পিঠের উপর ভর করে বা পেটের উপর ঘুমানো এড়িয়ে চলা ভালো।
৪. প্রেগন্যান্সি তে কি করা উচিত না?
অতিরিক্ত পরিশ্রম, না জেনে ওষুধ খাওয়া, মানসিক চাপ নেওয়া, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, গরম পানিতে স্নান, ও ঝুঁকিপূর্ণ গৃহস্থালী কাজ যেমন ছাদে ওঠা বা জানালা ধোয়া করা উচিত নয়।
৫. গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কি করা যাবে না?
প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারী কাজ, ভ্রমণ, গরম পানিতে স্নান, কাঁচা খাবার খাওয়া এবং ধূমপান/অ্যালকোহল গ্রহণ একেবারে নিষিদ্ধ। এটি ভ্রূণের গঠনকাল, তাই বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন।
৬. গর্ববতী হওয়ার ৩ মাসের লক্ষণ কী কী?
বমি বমি ভাব, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা একেবারে কমে যাওয়া, ঘুমের প্রবণতা, স্তনে জড়তা, হালকা রক্তপাত, মুড সুইং এবং হরমোনের পরিবর্তনজনিত মানসিক অস্থিরতা দেখা যায়।
৭. গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, পরিমাণ মতো আঙ্গুর খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত খেলে রক্তে চিনি বাড়তে পারে। যাদের ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে, তারা সাবধানে খাবেন।
৮. গর্ভবতী অবস্থায় সাদা স্রাব হয় কেন?
গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে সাদা স্রাব (লিউকোরিয়া) স্বাভাবিক। এটি জরায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে যদি দুর্গন্ধ, চুলকানি বা রঙ পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।