সাইনাস সংক্রমণ: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা

সাইনাস সংক্রমণ (Sinus Infection) বা সাইনোসাইটিস (Sinusitis) হলো নাকের চারপাশে থাকা ফাঁপা বায়ুভর্তি গহ্বরগুলোর প্রদাহ বা সংক্রমণ। এটি একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে, মাথাব্যথা বাড়ায় এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে। বাংলাদেশে আবহাওয়া, দূষণ, ধুলাবালি অ্যালার্জির কারণে সাইনাস সংক্রমণ খুবই সাধারণ একটি সমস্যা।

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবসাইনাস সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা নিয়ে।

সাইনাস কী?

সাইনাস সংক্রমণ

সাইনাস হলো মাথার খুলি বা খুলির হাড়ের ভেতরে থাকা ছোট ছোট ফাঁপা জায়গা, যেগুলো বায়ুভর্তি থাকে এবং নাকের ভেতরের অংশের সাথে সংযুক্ত। এগুলো নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সাহায্য করে, বাতাসকে আর্দ্র করে এবং কণ্ঠস্বরকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে।

যখন এই সাইনাসের ভেতরের ঝিল্লি ফুলে যায় বা সংক্রমিত হয়, তখনই তাকে সাইনাস সংক্রমণ বা সাইনোসাইটিস বলা হয়।

সাইনাস সংক্রমণের কারণ

সাইনাস সংক্রমণ হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

. ভাইরাস সংক্রমণ

সাধারণ সর্দিকাশির ভাইরাস থেকে অনেক সময় সাইনোসাইটিস হয়।

. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ

ভাইরাসের সংক্রমণের পর ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে সাইনাস ইনফেকশন আরও জটিল হয়ে ওঠে।

 

. অ্যালার্জি

ধুলা, পরাগ রেণু, ধোঁয়া বা পশুর লোমের কারণে অ্যালার্জি হলে সাইনাসের ঝিল্লি ফুলে যায় এবং সংক্রমণ হয়।

. নাকের গঠনগত সমস্যা

  • নাকের হাড় বাঁকা হলে (Deviated Nasal Septum)
  • নাকের ভেতরে টিউমার বা নাসাল পলিপ থাকলে।

. পরিবেশগত কারণ

  • ধুলাবালি, ধোঁয়া বায়ুদূষণ।
  • ঠান্ডা আবহাওয়া বা হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন।

. অন্যান্য কারণ

  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
  • দাঁতের সংক্রমণ নাকে ছড়িয়ে পড়া।

সাইনাস সংক্রমণের লক্ষণ

সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ সংক্রমণের ধরণ তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি জমে থাকা।
  • মাথাব্যথা, বিশেষ করে কপালের উপর চোখের চারপাশে।
  • মুখ বা দাঁতে চাপজনিত ব্যথা।
  • গলায় সর্দি পড়া (Post-nasal Drip)
  • নাক দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হওয়া।
  • কাশি, বিশেষত রাতে বেশি হয়।
  • জ্বর, অবসাদ বা শরীর দুর্বল লাগা।
  • গন্ধ স্বাদের অনুভূতি কমে যাওয়া।

 

সাইনাস সংক্রমণের ধরণ

সাইনোসাইটিসকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়

  1. অ্যাকিউট সাইনোসাইটিস (Acute Sinusitis): সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
  2. সাবঅ্যাকিউট (Subacute): ১২ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
  3. ক্রনিক সাইনোসাইটিস (Chronic): ১২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং পুনঃপুনঃ দেখা দেয়।
  4. রিকরেন্ট সাইনোসাইটিস (Recurrent): বছরে একাধিকবার সাইনাস সংক্রমণ হওয়া।

 

সাইনাস সংক্রমণের জটিলতা

সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সাইনাস ইনফেকশন থেকে নানা জটিলতা হতে পারে

  • কান সংক্রমণ।
  • গলা বা ব্রঙ্কাইটিসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া।
  • চোখের চারপাশে ফোলা বা ইনফেকশন।
  • বিরল ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া।

 

সাইনাস সংক্রমণের চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে সংক্রমণের ধরন তীব্রতার উপর।

. ওষুধ

  • ভাইরাসজনিত হলে সাধারণত কয়েকদিনে নিজে থেকেই সেরে যায়।
  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক।
  • অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন।
  • নাক বন্ধ কমাতে ডিকনজেস্ট্যান্ট।
  • ব্যথা জ্বর কমাতে পেইন রিলিভার।

. হোম রেমেডি

  • প্রচুর পানি পান করা।
  • গরম পানির ভাপ নেওয়া।
  • স্যালাইন ওয়াটার দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম।

. সার্জারি

যদি নাকের গঠনগত সমস্যা থাকে বা নাসাল পলিপ থাকে, তবে এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়।

 

সাইনাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়

  • ধুলাবালি, ধোঁয়া দূষণ এড়িয়ে চলা।
  • নিয়মিত হাতমুখ ধোয়া।
  • অ্যালার্জির উৎস থেকে দূরে থাকা।
  • নাকে বারবার আঙুল না দেওয়া।
  • পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা।

 

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

  • ১০ দিনের বেশি সর্দিকাশি নাক বন্ধ থাকলে।
  • তীব্র মাথাব্যথা বা চোখের চারপাশে ফোলা হলে।
  • ঘন ঘন সাইনাস ইনফেকশন হলে।
  • উচ্চ জ্বর অবসাদ থাকলে।

এক্ষেত্রে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

সাইনাস সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক সাইনোসাইটিসের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

যদি আপনি ঢাকায় অভিজ্ঞ নাককানগলা বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে চান, তবে এখানে দেখে নিতে পারেন ঢাকার নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তার নির্বাচনই সাইনাস সংক্রমণের কার্যকর সমাধান।

 

Leave a Comment